সরকারি ওষুধ দোকানে বিক্রির অভিযোগ
শিবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রায় ৬ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। সেটিও চিকিৎসক-নার্স সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে উপজেলাটিতে ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবার মান। এসব অভিযোগ- রোগি ও তার স্বজনদের। তবে জনবল সঙ্কটেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি ওষুধ বাইরের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বলেও অভিযোগ রোগিদের। ফলে তারা কাক্সিক্ষত ওষুধ না পেয়ে বেশি দামে বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। রোগীদের অভিযোগ- স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা দেয়া হলেও নায্য পাওনা ওষুধ মেলে না রোগিদের কপালে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন। এমনকি তারা দায়িত্বরত চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন দিচ্ছেন। এমন চিত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলেই দেখা মেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বিভিন্ন বিভাগে ১৫ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮ জন। বিপরীতে শূন্য পদের সংখ্যা ৭। চক্ষু, অর্থোপেডিক্স, ইএনটি, কার্ডিওলজি, মেডিকেল অফিসার, এনেসথেসিওলজিস্ট, সহকারী সার্জন- এসব পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। সব মিলিয়ে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী ও কর্মচারীসহ মোট পদের সংখ্যা ২০৭। এর মধ্যে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন মাত্র ১১৬ জন। মোট শূন্য পদের সংখ্যা ৪১।
চিকিৎসক-নার্স সঙ্কটে হাসপাতালটিতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি- অনলাইনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে টেলিমেডিসিনের ব্যবস্থা করা করা হয়।
রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি কোন সমস্যা নিয়ে আসলেও কোন রকম প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সদর হাসপাতাল অথবা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র: শিবগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও ব্যাপক জনবল সঙ্কট দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে মেডিকেল অফিসার, স্যাকমো, এমএলএলএস, ফার্মাসিস্ট ও সহকারী সার্জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা চত্বরজুড়ে দালালদের দৌরাত্ম্য। দালালরা প্রতিটি রোগীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা। বঞ্চিত হচ্ছেন সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থা থেকে। দালাল ক্লিনিকের সঙ্গে রোগীপ্রতি চুক্তি করে সন্ধ্যার সময় হিসাব শেষে টাকা লেনদেন করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোগী জানান, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোয় চিকিৎসক থাকলে সেখানে তাদের চিকিৎসা নিতে নিরুৎসাহ করে দালালরা। পরে ওইসব রোগিদের ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। শুধু তাই নয়, কিছু রোগিকে তারা নিজেরাই বেসরকারি ক্লিনিকে পৌঁছে দেন।
সরেজমিন ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ঘুরে আরও দেখা গেছে, দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তাই সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তারা শুধু ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল উদ্দিন বলেন, জনবল সঙ্কটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে। দালাল দৌরাত্ম্য কমাতে স্থানীয় ক্লিনিকগুলোকে সর্তক করা হয়েছে। তিনি বলেন, কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভিড় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। শিগগির ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া রোগীর তুলনায় ওষুধ বরাদ্দ বেশি হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রোগিরা কাক্সিক্ষত ওষুধ পাবেন। তিনি আরও বলেন, জনবল সঙ্কট থাকলেও হাসপাতালে সেবার মান দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ছে।
চাঁপাইবার্তা/সিসি।।