নিমতলা মোড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ০১৭১৫-৯৭৫০৮৫
প্রকাশিত হয়েছে: বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ - ৪:০৫ অপরাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরে আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেট দুই মোতোয়ালির দ্বন্দ্বে উতপ্ত হয়ে উঠেছে মহুরাজপুর চৌধুরীপাড়া। সাবেক মোতোয়ালি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী এবং বর্তমান মোতোয়ালি গোলাম ফারুক রুমির ভোগ-দখল নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণ দু’পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যেকোন মুহূর্তে বড়ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০ দিকে জুবিন চৌধুরীর সমর্থক এবং গোলাম ফারুক রুমির সমর্থক মহারাজপুরের শিশা বাগানে মুখোমুখি অবস্থান নেন। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়দের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯২৫ সালে মরহুম আবদুল আজিজ চৌধুরী ৪৬৩ দশমিক ৬২ একের সম্পত্তি লিল্লাহে ওয়াকফ করেন। এরমধ্যে রয়েছে ধানী জমি, পুকুর, খাড়ি, বসতবাড়ি, আমবাগান ও মেহগনি গাছ। ওয়াকফ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমানুসারে মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হচ্ছিল। সর্বশেষ ২০১৫ সালে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন গোলাম ফারুক। এরপর থেকেই ওয়াকফ এস্টেট নিয়ে শুরু হয় অস্থিরতা।
বর্তমান মোতয়াল্লী গোলাম ফারুক রুমিকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিযুক্তের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়াকফ প্রশাসক বিস্তারিত সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সেকান্দার রহমান ওরফে জুবিন চৌধুরীকে অপসারণ করে আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে রিট করলে আপিল বিভাগ আমার পক্ষে রায় দেন। এরপর সেকান্দার রহমান পুনরায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ০৬/১৯নং মিস আপিল করলে শুনানি শেষে আমার পক্ষে রায় হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭৬০/২৩নং সিভিল রিভিসান করলে তা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের বার হেরে তিনি এখন অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন।
সাবেক মোতোয়ালি সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী বলেন, গোলাম ফারুক অবৈধভাবে দখলে নেয় আবদুল আজিজ ওয়াক্ফ এস্টেট। এরপর থেকে এস্টেটের নিয়ম অমান্য করে গত ১০ বছরের বেশী সময় ধরে সম্পদ লুণ্ঠন করছেন। লাখ লাখ টাকার গাছ পালা চোখের সামনে কেটে বিনিষ্ট করছেন। ইতিমধ্যে মুকুলিত আমগাছ, মেহগনিসহ শিশুগাছ কেটে ফেলেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভের স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সুষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি এস্টেটের ভেতরের প্রায় ১৩টি আম গাছ, ১১টি মেগগনি ও ৮টি শিশু গাছ কেটে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। গাছগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। গাছগুলো মরে যাচ্ছে এমন অজুহাতে কাটা হচ্ছে। অবৈধভাবে ওয়াকফ এস্টেট দখলে রেখে গত ১০ বছরে বিপুল গাছপালা বিক্রি করেছেন মোতাওয়াল্লী গোলাম ফারুক। তিনি পুরোপুরি বিধি উপেক্ষা করে মোতাওয়াল্লী নিযুক্ত হন। সরকারি চাকরিজীবী হয়েও ওয়াকফ এস্টেস্টের সম্পতির ওপর রক্ষিত মূল্যবান গাছপালা কেটে বিক্রি করে তছরূপ করে চলেছেন।
অন্যদিকে, বর্তমান মোতোয়ালি গোলাম ফারুক রুমি বলেন, আমি স্বেচ্ছায় কোন গাছ কাটিনি। পুরাতন এই বাগানে ৭ বছরে ৪-৫টি গাছ মারা গেছে। সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। তবে ফাঁকা জায়গায় নতুন করে গাছ রোপণ করা হয়েছে। ওয়াকফ এস্টেটের দোতালা বাড়ির দরজা-জানালা তৈরির জন্য ২-৩টি মেহগনির গাছ কাটা হয়েছে। শুধুমাত্র আমাকে হয়রানি করার জন্য নানাধরনের ছলচাতুরি করা হচ্ছে।
তিরি আরও বলেন সেকান্দার রহমান চৌধুরী ওরফে জুবিন চৌধুরী মাত্র ১ বছর বয়সে তার মা পারভীন চৌধুরীকে অবিভাবক নিযুক্ত করে মতোয়াল্লীর দায়িত্ব দেন। কিন্তু বিধানমতে নাবালক এবং কোন মহিলা মতোয়াল্লী নিযুক্ত হতে পারবে না। দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে তিনি সেই দায়িত্বে থাকলেও ওয়ারিশদের কোন টাকা পরিশোধ করেনি। এরপর প্রায় ২ কোটি টাকায় একটি আমবাগান গোরস্থান কমিটির কাছে বিক্রি করে। এছাড়া বারঘোরিয়া বিলের ১৮ বিঘা জমি প্রায় ২৫ লাখ টাকায় জালাল উদ্দিনের কাছে বিক্রি করে।
চাঁপাইবার্তা/এম।।