ভাঙা-গড়ার খেলায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব

শিবগঞ্জে ১৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদীভাঙন

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। ইতিমধ্যে বিলীন হয়েছে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি আর বসতবাড়ি। ভিটে মাটি হারিয়ে দিশাহারা অনেক পরিবার। ভাঙা-গড়ার এমন খেলায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের দাবি- টেকসই বাঁধ নির্মাণ। তবে ভাঙন রোধে নানা পরিকল্পনা ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে, বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, উপজেলার মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর ভাঙনে বসত ভিটা, ফসলি জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। বিলীন হয়ে যাচ্ছে সংযোগ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, দুর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন চলছে। এতে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, দুর্লভপুর ইউনিয়নের রামনাথপুর, মনোহরপুর, পণ্ডিতপাড়া, আইয়ুব বিশ্বাসের গ্রাম, দোভাগী ঝাইলপাড়া, পাঁকা ইউনিয়নের চর-কানছিঁড়া জাইঠপাড়া, লক্ষ্মীপুর পাঁকার ঘাট এবং মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর ঠুঁঠাপাড়ার মতো জনবহুল সব গ্রাম।

দোভাগী ঝালপাড়া গ্রামের মাহবুব আলম বলেন, ২৭ বছর আগে পদ্মা নদীতে বসত বাড়ি হারিয়ে এই গ্রামে বাড়ি করেছিলাম। এখন এখানে থাকাও সম্ভব হবে না। কারণ পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ফসলি জমি। তার বসতবাড়িও ঝুঁকিতে রয়েছে। সোমবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ। বাড়ি সরিয়ে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। ৩০ বছর ধরে পদ্মা নদী আমাদের পিছু ছাড়ছে না।

একই গ্রামের মার্জিনা বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন এই ভাঙা-গড়ার খেলা। ১৯৮৮ সালে তার বিয়ে হওয়ার পর ১৯৯৭ সালে পদ্মা নদীভাঙনের কবলে পড়েন। তখন বসতি গড়েন এই গ্রামে। তার শ্বশুরের ৭০ বিঘা জমি ছিল। সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এবার নদী ভাঙনে কবলে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য কোথায় যাবেন সেই চিন্তার কথা জানান তিনি।

সুরমা খাতুনেরও একই অবস্থা। বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে কিছু দূরে কুঁড়েঘর করে বসবাস করছেন। এবার দিয়ে ৪ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন তারা। একই গ্রামের মাহবুর আলী বলেন, নদীতে বাড়ি ঘর হারিয়ে ৮ বছর আগে এই গ্রামে বসতি গড়েন। এবার ভাঙনের কবলে পড়ে অন্যের জমিতে আসবাবপত্র রেখেছেন। এ নিয়ে ৩ বার নদীভাঙনের কবলে পড়লেন তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, গত ৪ দিন থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রায় ৩৩০ মিটার জিও ব্যাগ ও জিওটিউব পানিতে তলিয়ে গেছে। ২০০ মিটার ফসলি জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। সরিয়ে নেয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি। ভাঙন আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছে। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন তিনি।

প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব। তিনি বলেন, নতুন করে নদীভাঙনের বিষয়টি র্ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছি। জরুরি আপৎকালীন কাজ বাস্তবায়নে দীর্ঘ মেয়াদি সুফল পাওয়া যায় না। এজন্য পদ্মা নদীর ডান এবং বাম তীর রক্ষায় ২৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা তীরবর্তী এলাকা স্থায়ীভাবে নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।

চাঁপাইবার্তা/এম।।