ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ হোক চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোতে

দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ। জেলাটিকে আমের রাজধানী বলেই চেনেন সবাই। আমের পাশাপাশি জেলার ঐতিহাসিক নিদর্শন এবং প্রত্নসম্পদেও সমৃদ্ধ। জেলায় পাঁচটি উপজেলা। তার মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দর্শনীয় স্থান আছে।

ছোট সোনামসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। যা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত । ইতিহাসের ৫০০ বছরের সাক্ষী এই ছোট সোনা মসজিদ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। মধ্যযুগের সুলতানি আমলের গৌড়নগরীর এক ঐতিহাসিক স্থাপনা এই ছোট সোনা মসজিদ। মসজিদটিকে বলা হতো ‘গৌড়ের রত্ন’। মসজিদের বাইরের দিকে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল। সূর্যের আলো পড়লেই তা সোনার মতো ঝলমল করে উঠত। এ জন্যই এর নাম হয়ে যায় সোনা মসজিদ। তবে অযত্নে সোনা মসজিদের সেই সোনালি রং এখন আর নেই। এখন তামাটে রঙে পরিণত হয়েছে।

মধ্যযুগে বাংলার স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে (১৪৯৩-১৫১৯) নির্মিত হয় ছোট সোনা মসজিদ। নির্মাতা হিসেবে ওয়ালী মুহাম্মদের নাম পাওয়া যায়। মসজিদের মাঝের দরজার উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকে এ তথ্য জানা যায়।মসজিদটি ইট দিয়ে তৈরি। তার ওপর পাথরের একটি স্তর বসানো আছে। মসজিদের বাইরের পরিমাপ ৮২ ফুট বাই সাড়ে ৫২ ফুট; ভেতরের পরিমাপ ৭০ ফুট ৪ ইঞ্চি বাই ৪০ ফুট ৯ ইঞ্চি। উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট।

ছোট সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে৷ রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সন্তানের কবর। মসজিদের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে সীমানাপ্রাচীরের ভেতরেই বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মুক্তিযুদ্ধে ৭ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মুক্তিযোদ্ধা মেজর নাজমুল হকের কবর।

খনিয়াদিঘী মসজিদ

খনিয়া দিকে মসজিদ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আরও একটি মসজিদ। যার অবস্থান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি.অদূরে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ছোট সোনা মসজিদের সন্নিকটে। এটি আনুমানিক ১৫'দশ শতকে নির্মিত হয়েছিলো, যা গৌড়ের প্রাচীন কৃতিগুলোর অন্যতম মনে করা হয়। ধারণা করা হয় ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দে কোন এক রাজবিবি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি স্থানীয়ভাবে চামচিকা মসজিদ এবং রাজবিবি মসজিদ নামেও পরিচিত।

দারাস বাড়িমাদরাসা ও চল্লিশঘর আরবি শিলালিপি অনুসারে ৮৮৪ হিজরি অনুযায়ী ১৪৭৯ সালে সুলতান শামসউদ্দিন ইউসুফ শাহের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে মসজিদটি নির্মিত হয় তার কয়েকশ মিটার দূরেই দারাসবাড়ি মসজিদ। এর আয়তন ৯৯ ফুট ৫ ইঞ্চি ও ৩৪ ফুট ৯ ইঞ্চি। উপরে ৯টি গম্বুজের চিহ্নাবশেষ রয়েছে। এখন শুধু মসজিদটির ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। দারসবাড়ি মসজিদের বাহির এবং অভ্যন্তর দেয়ালে টেরাকোটা খচিত। আশপাশের যে ক’টি মসজিদ আছে সে সবের চেয়ে এ মসজিদটি অধিকতর সুন্দর। জানা যায়, এখানে প্রায় ৫০০ বছর আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। তাহখানা কমপ্লেক্স

তাহখানা পারসিয়ান শব্দ যার আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন বা প্রাসাদ। গৌড়-লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকায় একটি বড় পুকুরের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ভবন কাঠামোটি ঐতিহ্যগতভাবে তাহখানা নামে পরিচিত।সমাধিটি সম্ভবত দরবেশের (মৃত্যু ১৬৬৪ অথবা ১৬৬৯ খ্রিঃ) অন্তিম শয়নের জন্য পূর্বেই নির্মিত হয়েছিল।

শিবগঞ্জ উপজেলা ফিরোজপুরস্থিত শাহ্ নেয়ামতউল্লাহ (রহ.) প্রতিষ্ঠিত তদীয় সমাধি সংশ্লিষ্ট তিন গম্বুজ মসজিদটি মোঘল যুগের একটি বিশিষ্ট কীর্তি। এতে ৩টি প্রবেশ পথ এবং ভেতরে ৩টি মেহরাব রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউয়িনের দুই নম্বর ওয়ার্ডের আলীশাহপুর গ্রামে প্রায় ৫শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক আলী শাহপুর মসজিদ কালের সাক্ষী হিসাবে আজও দাঁড়িয়ে আছে।

ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনাগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশ ও দেশের বাইরে হতে পর্যটকরা ভিড় করেন। এসব স্থাপনার পাশেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থলবন্দর হওয়ায় পর্যটকের সংখ্যা আরও বেশি হয়। কারণ এই স্থলবন্দর দিয়েই প্রতিদিন হাজারো মানুষ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে যাতায়াত করে। তাছাড়া শত শত টন পণ্য আমদানি-রফতানি হয় স্থলবন্দর দিয়ে।

চাঁপাইবার্তা/ডিএম।।