বিপদ-আপদ ও ক্ষতি থেকে বাঁচার কার্যকরী দোয়া

বান্দার যেকোনো সমস্যায় আল্লাহ তাআলা একমাত্র সহায়। তিনি বান্দাকে যেকোনো বিপদাপদ, অকল্যাণ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করেন। বান্দার ডাকে তিনি সাড়া দেন, দোয়া কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
তাই বান্দার দায়িত্ব হলো— যেকোনো প্রয়োজনে দয়াবান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। প্রিয়নবী (স.) বিভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দোয়া করেছেন এবং উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। তার একটি হলো- আচমকা বিপদাপদ ও যেকোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার দোয়া।
দোয়াটি হলো- بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আ ইসমিহী শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল ‘আলীম। অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, যার নাম (স্মরণের) সাথে আসমান ও জমিনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।’
উসমান বিন আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় যে বান্দা তিনবার এ দোয়া পাঠ করবে কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৮, ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান গরিব সহিহ; ইবনুল কাইয়্যেম জাদুল মাআদ গ্রন্থে (২/৩৩৮) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন এবং আলবানি ‘আবু দাউদ’ গ্রন্থে সহিহ বলেছেন)
এছাড়াও যেকোনো মসিবত, বদ নজরসহ সবরকম ক্ষতিকর জিনিস থেকে সুরক্ষা পেতে সকাল-সন্ধ্যায় তিন বার করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়া কার্যকর আমল। রাসুলুল্লাহ (স.) আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি প্রতিদিন বিকেলে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সুরা কুল হুআল্লাহু আহাদ অর্থাৎ সুরা ইখলাস এবং মুআওবিজাতাইন অর্থাৎ সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করবে, তাহলে তা তোমার প্রত্যেক বিষয়ের জন্য যথেষ্ট হবে।’ (তিরমিজি: ৩৫৭৫)
সুরা ইখলাস
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللَّهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ উচ্চারণ: ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুস-সামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ।’ অর্থ: ‘বলো, তিনিই আল্লাহ, একক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি, কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তার সমতুল্য কেউ নেই।’
সুরা ফালাক
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ - مِن شَرِّ مَا خَلَقَ - وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ - وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ - وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ উচ্চারণ: ‘কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক্ব; মিন শাররি মা খালাক্ব; ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইজা ওয়াক্বাব; ওয়া মিন শাররিন নাফ্ফাছাতি ফিল উক্বাদ; ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইজা হাসাদ।’ অর্থ: ‘বলো আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঊষার রবের কাছে; তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে যখন তা সমাগত হয়, গ্রন্থিতে ফুৎকার দিয়ে জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।’
সুরা নাস
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ - مَلِكِ النَّاسِ - إِلَهِ النَّاسِ - مِن شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ - الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ - مِنَ الْجِنَّةِ وَ النَّاسِ উচ্চারণ: ‘কুল আউজু বিরাব্বিন নাস; মালিকিন্ নাস; ইলাহিন্ নাস। মিন্ শররিল ওয়াস্ওয়াসিল খান্নাস; আল্লাজি ইউওয়াসয়িসু ফি ছুদুরিন নাস। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস।’ অর্থ: ‘বলো, আমি আশ্রয় চাই মানুষের রবের কাছে, মানুষের অধিপতির কাছে, মানুষের মাবুদের কাছে। তার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় ও আত্মগোপন করে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে; জ্বিন হোক বা মানুষ হোক।’
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উল্লেখিত দোয়া ও তিন কুল প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে পাঠ করার তাওফিক দান করুন। এই দোয়ার বরকতে আল্লাহ তাআলা আমাদের সকল প্রকার ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
চাঁপাইবার্তা/ডিএম।।